#কল্পবিজ্ঞান

ঘুম থেকে উঠে দেখে ডেলিসা তার আগেই উঠে পড়েছে। তবে নিনোর ঘুম আজ অনেক ভালোই হয়েছে৷
ডেলিসা - আপনার ঘুম কেমন হলো?
নিনো - এইতো ভালো। তবে আপনি এত তাড়াতাড়ি জেগে গেলেন যে?
ডেলিসা - হুম। আসলে ঘুম কেটে গেছে। কালকে ৯ টার মতন উল্কা দেখে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। তবে আপনি তো আরো আগে ঘুমিয়ে গেলেন।
নিনো - হুম। তা, বাড়ি যাওয়া যাক। আজকে বিকালটা আমার বাসায় কাটান।
ডেলিসা - হুম। অনেক গল্প করা যাবে৷
এই বলে বাসায় যাবার যন্য রওনা দেয় তারা। বাসায় এসে গোসল করে সব সেরে উঠতে দুপুর গড়িয়ে আসে। নিনো সাধারণত নিজেই খাবার পাকায়, যদিও তখন খাবার মানেই রেস্তোরা বা ট্যাবলেট । যা, হোক তবে ডেলিসা আজকে নিনোর খাবার বানানো দেখবেই, আর নিনোর কোনো কাজ কেউ দেখলে তার ইতস্তত বোধ হয়, তবে ডেলিসাও ছাড়বার পাত্র নয়। সেও আজ নিনোর বানানো খাবার টেস্ট করবে।
যা হোক নিনো খাবর বানালো, কারণ ঘরের মেহমানের আবদার ফেলতে নেই।
খাবার টেস্ট করে ডেলিসাতো অবাক, এমন রান্না একজন প্রফেশনালই পারেন।
.

ডেলিসা - বাহ! চমৎকার স্বাদ ! কার থেকে শিখেছেন?
নিনো - আম্মু থেকে।
ডেলিসা - ওহ। আন্টি ও আঙ্কেল কোথায় থাকেন?
নিনো - উনারা অন্য প্রান্তে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাবা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ৬ বছর আগে এক দুরঘটনায় মারা যান। আর মা ৫ বছর আগে শরীর অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবার মৃত্যু মাকে কাতর করে তুলেছিল। তাই হতো তাড়াতাড়ি বাবার কাছে চলে গেলেন।
ডেলিসা - আমি সত্যিই দুঃখিত।
নিনো - ওহ। সমস্যা নেই। তা আপনার টাইম ট্রাভেলের প্রতি এত আকর্ষণ কেন?
ডেলিসা - ছোটবেলায় আমি মাকে দেখিনি। আমাকে জন্ম দিয়েই মারা গিয়েছেন। বাবার মুখে সবসময় শুনেছি মা নাকি অনেক সুন্দর ও দয়ালু ছিলেন, বিশেষ করে প্রকৃতি প্রেমী। একবার কোন এক গল্পের বইতে পড়লাম, একজন টাইম ট্রাভেল করে তার প্রেমিকা কে বাচিয়েছেন! সেখান থেকেই মাকে দেখার জন্য টাইম ট্রাভেল এর চিন্তা মাথায় এল। তা অপনি কেন টাইম ট্রাভেলের জন্য এত কাজ করলেন?
নিনো - অতীতের নানা নিদর্শন দেখার জন্য। ভবিষ্যত নিয়ে তেমন একটা জানার ইচ্ছা নেই।
ডেলিসা - ওহ।
.

এইসব ছোট-খাটো কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। ডেলিসা চলে যাবার সময় হল। কাল ল্যাবে দেখা হবে এই বলে ডেলিসা সেদিনের মতো বিদায় নিল। আর নিনো ঘাটা-ঘাটি শুরু করে দিল। তার বাসায় আগের সকল টাইম রিলেটেড রিসার্চ পেপারস একত্র করতে লাগল। কালকে থেকে শেষ বারের মত টাইম ট্রাভেলের ওপর গবেষণা করবে সে। এইবারে হলে, হবে আর না হলে নেই। সব ফাইল একত্র করে গুছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
.

১ম দিন,
নিনো, ডেলিসা'র টিম প্রস্তুত। বৈজ্ঞানিকভাবে, বস্তুত মানব আচরণ সম্মত যেকোনো কাজ করতে গেলেই, দুটো বিষয় প্রয়োজন : তথ্য এবং চিন্তা। পরীক্ষালব্ধ তথ্য আর যুক্তিপূর্ণ চিন্তার সাহায্যে অগ্রসর হওয়া। নিনো ও তার টিম তাদের প্রাপ্ত সকল তথ্য নিয়ে চিন্তায় বসে। আগে কেন সম্ভব হয় নি। কি কি ত্রুটি ছিল। ত্রুটি গুলো একে একে বের করতে থাকে তারা, ত্রুটি গুলো মুলত সূত্রের। এক একটা পেপারস অনেক বড় বড়। টিমে সবায় ভাগ হয়ে দেখে শেষ করতে অনেক সময় লাগবে। তবে নিনো আর ডেলিসা থাকায় যে আজকে কাজটা অনেক আগেই শেষ হবে বলে টিমের অনেকেই আশাবাদী। যাহোক দুপুরের মধ্যে তথ্যের অনেকটা কাজই শেষ। তবে ত্রুটির সমাধান করা এবং তা সমাধান হলে কি হত বা হতে পারত তা জানা বাকি। নিনো খেয়াল করে যে সূত্রগুলোর সাফল্য এই কারণে ঘটেনি যে, সেগুলো বাস্তব বিশ্বজগৎ থেকে পাওয়া গেছে ; বরং সেগুলো দিয়ে যে সম্ভাব্য ভুবনটি সম্পর্কে অনুমান করা যায় তা আমাদের জানা এই ভুবনটির মতোই, এতে অবশ্য নিনো অবাক হয় নি। ডেলিসাও অনেক ভালোভাবেই এগুচ্ছে।
.

সন্ধ্যা পাড়ি দিয়ে রাত ঘনিয়ে এল। আজকের মতো ল্যাব-এর কাজ শেষ। কালকে মুলত তারা আগের সব তথ্যের উপর ভিত্তি করে, নতুন কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাবে। সকলেই বাড়ি চলে যায়। যাবার আগে ডেলিসা নিনোর কাছে রিসার্চ-এ রাজি হবার জন্য আরও একবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নেয়। কালকে থেকেই মূল কাজ শুরু হবে৷ নিনোও বাসায় যাবার উদ্দেশ্যে ল্যাব থেকে বের হয়।
.

ল্যাবটির এরিয়া বৃহৎ! কারণ ওই জাগায় আরো অনেক ল্যাব রয়েছে। তবে ছবির সেই মেয়েটির কথা মনে হওয়ায় পকেট থেকে ছবিটা বের করার সময় বাতাসের সাথে ছবিটা বা দিকে উড়ে যায় নিনোও ছবিটার পেছনে ছোটে, অবশ্য ধরে ফেলে সে। তবে ছবিটা ঠিক ড. মরিসের ল্যাবের সামনে গিয়ে পড়ে, নিনোর মনে আসে সে মরিসের গবেষণাপত্র দেখে নি। তাই সে মরিসের ল্যাবে ঢুকে পড়ে। সেখানে মেইন টেবিলের উপর সব পেপার রয়েছে। আর সেখানের কম্পিউটার এ বিজ্ঞানীদের প্রধান পাসোয়ার্ড দিয়ে নানা তথ্য নিনোর পেনড্রাইভ এ নিয়ে নেয়। কোনো এক্সপেরিমেন্ট ফেল হলে তখন আইনত ভাবে তার থেকে তথ্য নিতে দোষ নেই৷ তবে ল্যাবের মধ্যে নানা গন্ধে একটি মিষ্টি গন্ধ পায় সে। সেই রেল লাইনে যেমনটা পেয়েছিল ছিল ঠিক সেই একই গন্ধ। তবে এতে তার অস্বস্তি লাগছে। কারণ রেল-লাইনের আগেও সে এই গন্ধটা পেয়েছে। খুবই পরিচিত গন্ধ। যেন কোনো দামী পারফিউম, কিন্তু কার? এই ল্যাবে এই গন্ধ পাওয়া আসলেই অস্বাভাবিক । বেশি রাত হয়ে যাচ্ছে, কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা দেয় নিনো।
( চলবে )