#কল্পবিজ্ঞান


“When we see the shadow on our images, are we seeing the time 11 minutes ago on Mars? Or are we seeing the time on Mars as observed from Earth now? It’s like time travel problems in science fiction. When is now; when was then?” – Bill Nye.
.
চারিদিকে অন্ধকার। অন্ধকারের মাঝথেকে কে জানি নিনো-কে বলছে টাইম ট্রাভেল না করতে। অন্ধকার বিধায় কাউকে দেখছে না সে। আঁধারের মাঝে কোথাহতে যেন আলো আসছে। সামনে এগিয়ে দেখে সেই ছবির মেয়েটি। মেয়েটিই কি তাকে টাইমট্রাভেল করতে বারণ করছে? জিজ্ঞাসা করতে চাইলেই দেখে মেয়েটির চোখ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। ভয় পেয়ে যায় নিনো। পরে চোখ খুলে বুঝে পারে যে নিছক একটি দুঃস্বপ্ন। আজ উঠতে দেরি হয়েছে তার। কাল রাতে দেরিতে বাসায় আসায় আর এলার্ম দেয় নি সে। ফ্রেশ হয়ে রিসার্চ সেন্টারের উদ্দেশ্যে বের হয় সে৷ দেরি হয়ে গেছে। আজকে থেকে প্রধান কাজ শুরু।

.
ডে - ২
আগের সব তত্ত্ব দেখা হয়েছে৷ এখন নতুন থিওরির কাজ চলছে। আবার সে অনুযায়ী টাইমট্রাভেল যন্ত্র বানানোর কাজও আছে। নিনো ল্যাব এ গিয়ে দেখে ডেলিসা ও তার টিম কাজে লেগে পড়েছে। ডেলিসা এক জটিল সমস্যার সমাধানে মগ্ন। তাই "হাই" বলে তাকে ডিস্টার্ব করতে চায় নি নিনো৷ তবে ডেলিসা কে আজ বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। আরও সুন্দর লাগছে তার লম্বা চুলের কারনে৷ কাজ করতে করতে যখন চুল কপালে চলে আসে, ডেলিসা আবার সেগুলো কে পেছনে পাঠিয়ে দেয়। নিনো ডেলিসার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে৷ পরে নিনোর সামনে রিসার্চ টিমের একজন স্যার বলে রিসার্চ পেপার সামনে এগিয়ে দেয়৷ থিওরিটার কিছু জিনিস একটুখানি করে সংশোধন করে সে৷ তবে ৩ টা বড় সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে একটার নিচে দাগ দেখে নিনো ধরে নেয় যে, এটির সমাধান ডেলিসা করছেন। তাই সে অন্য দুটি সমস্যার মধ্যে আপেক্ষিক ভাবে সহজটি আগে বেছে নেয়। ল্যাবে কিছুক্ষণ কাজ করে বোঝতে পারে যে, সমস্যাটি যতটা সহজ ভেবেছিল প্রকৃতপক্ষে ততটা সহজ নয়। নিনো এইসব কাজ একা করতে ভালোবাসে৷ তার কাজের সময় আসেপাশে বেশি মানুষ থাকলে তার অস্বস্তি বোধ হয়। রিসার্চ ল্যাবটি মুলত বিজ্ঞানীদের সাধারণ অফিসের নিচে অবস্থিত। নিনো সমস্যাগুলো অফিসে নিয়ে যায়। আর নিরবে সমাধানে মনোনিবেশ করে।
.
মনোযোগ সহকারে কাজ করছে নিনো৷ পেছন থেকে "হাই নিনো" বলে ওঠে ডেলিসা। অংকের মাঝে ডাক দাওয়া নিনোর মোটেও পছন্দের নয়। অনেকটা বিরক্তিকর মুখে ডেলিসার দিকে তাকালো নিনো। তবে ডেলিসার হাস্যোজ্জ্বল সুন্দর মুখ দেখে তার সকল বিরক্তি গুম হয়ে গেল। ডেলিসা এমনিতেই সুন্দরী আর, হাসলে তাকে আরও সুন্দর দেখায়৷
নিনো - জ্বী। মানে হাই।
ডেলিসা - কখন এলেন আপনি? সকালে তো দেখিনি।
নিনো- একটু দেরি হয়েছিল। আপনাকে কাজে দেখে তাই ডিস্টার্ব করিনি।
ডেলিসা - ওহ।
নিনো - তা আপনাকে এত খুশি দেখাচ্ছে যে?
ডেলিসা - ৩ টা সমস্যার ১ টার সমাধান শেষ তাই। তা আপনিও কি একটা সমাধানের চেষ্টা করছেন নাকি?
নিনো - হুম। তবে এটা যত সহজ ভেবেছিলাম ততটা সহজ নয়। সময় লাগবে৷
ডেলিসা - কি বলেন! রাত হয়ে গেল যে! এত সময়!
নিনো - রাত কখন হলো! ক্যালকুলেশন - এ ছিলাম। তাই খবর নেই।
ডেলিসা - হা হা! সমস্যা নেই। তা আজকে তো আমাদের সিনিয়র কলিগের মেয়ের বিবাহ বার্ষিকী তা পার্টিতে যাবেন না?
নিনো - দেখি, সমস্যাটা সমাধান করে আসব। এর আগে নয়।
ডেলিসা- না, আসলে সবায় একত্রে বের হব। তাই আপনাকে বলতে এলাম। মেসেজ দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখেন নি, পরে ল্যাব-এর একজন থেকে জানলাম আপনি অফিসে। তাই জানাতে এলাম৷ এখন ১০ টা বাজে। ১১: ৪৫ - এ ল্যাব ছাড়বো৷ ভাবলাম একসাথে যাই।
নিনো - ওহ্৷ আপনারা চলে যেয়েন। আমি সমস্যাটা সমাধান না করে আপাতত উঠছি না।
ঠিক আছে বলে উঠেযায় ডেলিসা।
নিনোর এই অভ্যাস কখন যাবে কিনা কে জানে৷ রিসার্চ করার সময় মনে হয় একটা ব্লেকহোল পাশে বসিয়ে দিলে নিনোকে তার সমস্যার সমাধান হবার আগে যায়গা থেকে নড়াতে পারবে কিনা সন্দেহ।
.
অন্যদিকে , অনেকদিন ধরেই এন্টিসায়েন্স ও ইকো টেরোরিস্ট রা একটি বড় প্ল্যান বানাচ্ছিল। এন্টিসায়েন্স-এর এরা কোনো বিজ্ঞান পদ্ধতি গ্রহণ করতে রাজি নয়। তারা প্রকৃতিতে বিশ্বাসী, আরটিফিশালিটি প্রকৃতি ধবংষ করে। আর ইকো টেরোরিস্ট, তারা "গায়া থিওরিতে" বিশ্বাসী। তারা মনে করে পৃথিবী জীবিত। তাই তার প্রকৃতিকে সরিয়ে এত ডিজিটাল বানানোর কোনো মানে হয় না। ফলে তারা প্রকৃতি রক্ষার জন্য সব কিছু করবে৷ তারা জানে এই আরটিফিশালিটির পেছনে সব দোষ বিজ্ঞানীদের। তাই আজকে তারা একত্র হয়েছে, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মহলে আঘাত আনার। যদিও ভেতরে সিকিউরিটির জন্য যাওয়া যাবে না, তবে ১-২ টা সায়েন্টিস্ট মারতে পারলেই তাদের মনে শান্তি আসবে আজ । তাই নিরব ঘাতকের মত বিজ্ঞান মহলের বাহিরে গা ঢাকা দিয়ে অপেক্ষায় আছে তারা৷
.
নিনোর সমস্যা প্রায় সমাধানের দিকে। এখনি সমাধান হয়ে যাবে৷১১: ৪৫ হবার কিছু সময় বাকি৷ ডেলিসা ও অন্যান্য বিশ্ব কাপানো বিজ্ঞানীরা এখন বের হবে। একত্রে পার্টিতে যাবার জন্য। ১২টায় পার্টি। প্রথমেই একজন বের হয়। ঘতকরা তার দিকে গুলি তাক করে। শুট করার প্রিপারেশন নিতে গিয়ে দেখে তার পেছনে আরও কয়েকজন আসছে৷ মনে হয় তারাও বের হবে। এখন গুলি ছুড়লে পেছনের মানুষ গুলো সতর্ক হয়ে যাবে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। তাই অপেক্ষা করছে তারা। ২-১ জন কে মারার প্ল্যান এ আসলেও আজকে এর বেশি মারবে৷ তাদের চোখে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যাক্তি। কারণ বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে নিরবে তিলে তিলে ধবংষ করছে। পুরো প্রাকৃতিক থেকে কৃত্রিম করে ফেলছে। তাদের বেচে থাকার অধিকার নেই। এদের মরা উচিত।
.
মহলে ভায়োলেন্স ডিটেক্টর আছে। কোনো ভায়োলেন্স মাইন্ড ডিটেক্ট করতে পারলে মহলের ভেতর ও বাহিরে কড়া সিকিউরিটি চালু হয় আর অটো টাস্কফোর্স-এ ইনফরম যায়। ভায়োলেন্সকারীদের থেকে রক্ষার জন্য এটা বানানো। তবে ঘতকরা মনকে ট্রেনিং করেনিয়েছে যেন এতে ধরা না পড়ে। পেছনের বিজ্ঞানীগুলো বেরিয়ে আসে। ডেলিসাও তাদের সাথে আছে৷ তারা বেরিয়ে এলে মহলের দরজা বন্ধ হওয়া মাত্রই টেরোরিস্ট গুলি ছুড়তে শুরু করে৷ প্রথম গুলিতেই একজন নিহত। প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝতেপারে যে এটা টেরোরিস্টদের কাজ। প্রথম রাউন্ডে কয়েকজন নিহত সহ আনেকে আহত অবস্থায় আছে। ডেলিসা প্রথম রাউন্ডে পার পায় তবে পরের বার ভাগ্য সায় দিল না। বুকে গুলি লেগে ফুসফুস ছিদ্র হয়ে গিয়েছে। ডেলিসা মাটিতে লুটিয়ে পড়। চোখে সব অন্ধকার হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে শেষ আলোক বিন্দু টাও অন্ধকারে হারিয়ে যায়।
.
টেরোরিস্ট দের মাঝে দু'জন নতুন । তারা তাদের মনের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে। হিংস্র প্রবণতা বেড়ে যায় তাদের। ফলে রাডার ডিটেক্ট করে ফেলে, তীব্র এলার্ম বেজে ওঠে, টাস্কফোর্স-এর কাছে খবর চলে যায়৷ এলার্ম বাজতেই পালিয়ে যায় তারা।
.
হিসাব মিলিয়ে মাত্র টেবিল থেকে ওঠে নিনো। সিকিউরিটির জন্য পুরো মহল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে লক হয়ে যায়। যেন ভেতরে কেও প্রবেশ করতে পারে৷ নিনো সহ আরও ৩ জন ভেতরে ছিল৷ ডেলিসাকে ভেতরে না পেয়ে অনেকটা অস্থির হয়ে যায় সে। টাস্ক ফোর্স স্পটে আসলে মহল আনলক হয়। বেরিয়ে এসে নিনো দেখে তার অনেক ক্লোজ কলিগদের লাস মাটিতে পড়ে আছে। তার থেকে কিছু দূরেই পড়ে আছে ডেলিসার নিথর দেহ। তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে৷ মুখদিয়ে কিছু বলতে চেয়েও পারল না৷ টাস্ক ফোর্স-এর প্রধান নিনোর অনেক কাছের এক বন্ধু৷ নিনোকে দেখে তার অনেক খারাপ লাগে। তবে নিনোকে কিছু বলার নেই তার। শুধু সামনে গিয়ে ফরমালিটির খাতিরে সরি জানায় সে৷ রাত ১২টা বেজে ১৫ মিনিট। স্পট থেকে বাড়ির দিকে রওনা দেয় সে। ভারি মুখে মথা নিচু করে আস্তে আস্তে হাটছে, ভাবছে সে! টাস্ক ফোর্স গার্ড দিতে চেয়েছিল। নেই নি নিনো। আজকে সকালের সেই দুঃস্বপ্নের কথা মনে হয় তার আসলেই। সময় অভিশাপ নিয়ে আসে৷ বাসার সামনে এসে ভেতরে না গেয়ে জংগলে যায় সে। সেখানে গাছের নিচে হেলান দিয়ে ভাবে, কি করবে ! তার ক্লোজ কলিগরা মারা গেল৷ ডেলিসাও নেই। নিনো ডেলিসাকে হয়ো ওভাবে ভালোবাসতো না। কিন্তু কম সময়ে সবচেয়ে বেশি পছন্দের হয়ে তার! ডেলিসার শেষ বারের মতো টাইম ট্রাভেল নিয়ে কাজের প্রস্তাব সহ নানা পুরানো কথা আকাশে তাকিয়ে ভাবেছে নিনো। একটা বড় উল্কাপিণ্ড সাইকরে উড়ে যেতে দেখে সে। বড় একটা শ্বাস ফেলে। ভাবা শেষ কি করবে জানে সে! টাইমমেশিন! যে টাইমট্রাভেল করে অতিতে যাবে! দুর্ঘটনার কিছুক্ষন আগে! গিয়ে সকলে সাবধান করবে! টাস্ক ফোর্স-এ খবর দিয়ে উগ্রবাদীদের ধরিয়ে দেবে! কেওই মরবে না! সবই ঠিক থাকবে! ডেলিসাও মরবে না!

.
বসা থেকে উঠে দাড়ায় নিনো। দৌড়ের ওপর বের হতে থাকে জংগল থেকে! সময় নষ্ট কারার মত সময় তার নেই। পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার সেই বন্ধু মানে টাস্ক ফোর্স এর হেডকে ফোন দেয় সে! জানায়, সে ল্যাবে আসছে। যেন সব ক্লিয়ার থাকে! তাকে মানা করলেও আজকে সে যাবেই! হেড অনেক বোঝালো তবুও বন্ধু বলে কথা! শেষ-মেষ নিনোকে সব ক্লিয়ারের ওয়াদা করে সে। তবে ল্যাবের আশেপাশে গার্ড থাকবে৷ এতে সমস্যা নেই, জানায় নিনো। ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেসে। হেটে হেটে আজকে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।
গন্তব্য সেই রিসার্চ ল্যাব। গাড়ি চলছে সবোচ্চ গতিতে! টাইম ট্রাভেল না করে অন্য কোনোকাজে সময় নষ্ট করার মুডে নেই নিনো।
( চলবে )