পারমিয়ান
১। কারবনিফেরাসের ঘন দুর্ভেদ্য আদিম বনভূমির কথা মনে আছে? ওই যে যেখানে উড়ে বেড়াত ৩ ফুট লম্বা ফড়িং আর চড়ে বেড়াত ৮ ফুট লম্বা চ্যারা/কেন্নো? একদিন এই ঘন দুর্ভেদ্য জঙ্গল বিশাল পৃথিবীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো.
বাতাসে ৩৩ ভাগ অক্সিজেন পেয়ে গাছের সংখ্যা বাড়তেই থাকলো, বাড়তেই থাকলো। এই গাছগুলো বাতাস থেকে শুষে নিতে থাকলো কার্বন ডাই অক্সাইড। গাছগুলো হয়তো ভাবছিল সবাই ওদের উপর খুব খুশি, আরও অক্সিজেন চাই, CO2 চাই না।
এদিকে হয়েছে কি, CO2 তাপ ধরে রেখে পৃথিবীকে বেশি ঠাণ্ডা হতে দেয় না। CO2 এর পরিমাণ কমে যাওয়াতে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমতে থাকলো। মেরু অঞ্চলের বরফ বেড়ে গিয়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা কমে গেল ১০০ মিটার। আর এই বিপর্যয়ের, সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হোল ওই গাছগুলো। গরম অঞ্চলের রেইন ফরেস্টের গাছ, ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। বেচারারা মারা পড়ল শয়ে শয়ে। অনেক জায়গায় পাইনের বন দখল করে নিলো ফার্নের বনকে। অনেক জায়গায় সেটাও হোল না। বিরাট বিরাট জঙ্গল পরিণত হল মরুভূমিতে। গাছ কমাতে অক্সিজেন কমলো, কারবনিফেরাসের বিরাট বিরাট পোকামাকড়গুলো আস্তে আস্তে কালের গর্ভে হারিয়ে গেল।
বরফে ঢাকা কারবনিফেরাসের বিরান ভূমিতে শুরু হোল নতুন যুগ: পারমিয়ান।
২।
পৃথিবীর ইতিহাসে ৩০ কোটি বছর আগে থেকে শুরু করে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগ পর্যন্ত সময় কালের নাম পারমিয়ান পিরিয়ড। বরফের আঁতুড়ঘরে তার জন্ম, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে তার মৃত্যু। সেই সময় সাড়া পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশ একসাথে হয়ে গড়ে তুলেছে বিরাট এক মহাদেশ, নাম প্যাঞ্জিয়া। চারপাশে তার প্যান্থালাসা নামের বিশাল এক সমুদ্র।
পৃথিবীর ইতিহাসে ৩০ কোটি বছর আগে থেকে শুরু করে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগ পর্যন্ত সময় কালের নাম পারমিয়ান পিরিয়ড। বরফের আঁতুড়ঘরে তার জন্ম, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে তার মৃত্যু। সেই সময় সাড়া পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশ একসাথে হয়ে গড়ে তুলেছে বিরাট এক মহাদেশ, নাম প্যাঞ্জিয়া। চারপাশে তার প্যান্থালাসা নামের বিশাল এক সমুদ্র।
এই বিরাট বিস্তৃত মহাদেশের মরুভূমিতে, পাইনের বনে আর বরফে ঢাকা প্রান্তরে রাজত্ব করছে ম্যামাল-লাইক রেপ্টাইলরা, আজকের ম্যামালদের পূর্বপুরুষ।
চলুন ঘুরে আসি পারমিয়ান থেকে।
৩।
একটু আগে জঙ্গলে গরগনপ্সিডের পায়ের ছাপ দেখা গেছে, আর বেশি ঘুরাঘুরি করা উচিত হবে না। ১০ ফুট লম্বা পারমিয়ানের এই বাঘের তীক্ষ্ণ শ্বদন্ত, একটা মানুষকে ছিরে খেয়ে ফেলতে বেশিক্ষণ লাগবে না। মাটিতে রাত কাটানো উচিত হবে না, শক্তপোক্ত একটা পাইন গাছ দেখে উঠে মাচা খাটানো উচিত।
একটু আগে জঙ্গলে গরগনপ্সিডের পায়ের ছাপ দেখা গেছে, আর বেশি ঘুরাঘুরি করা উচিত হবে না। ১০ ফুট লম্বা পারমিয়ানের এই বাঘের তীক্ষ্ণ শ্বদন্ত, একটা মানুষকে ছিরে খেয়ে ফেলতে বেশিক্ষণ লাগবে না। মাটিতে রাত কাটানো উচিত হবে না, শক্তপোক্ত একটা পাইন গাছ দেখে উঠে মাচা খাটানো উচিত।
বরফ যুগ শেষ হলেও এই এলাকায় ঠাণ্ডা পরে ভালো। গাছের উঁচু একটা ডাল দেখে গায়ে জ্যাকেট জরিয়ে বিছানা পাতলেন। অসংখ্য তেলাপোকা আর ফড়িঙের উড়াউড়িতে মুখর বনানী। মাচার উপর মশারি পেতে ঘুমানোর আয়োজন করা উচিত, সকালে শিকারে বের হতে হবে। ছোট একটা কচ্ছপ জাতীয় আনাপ্সিড এর বারবিকিউ খেয়ে ২ দিন চলছেন, নতুন কিছু দরকার।
মাঝরাত। কিসের একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। পোকামাকড় তেলাপোকা সব চুপচাপ। আকাশে বিরাট বড় একটা চাঁদ উঠেছে, তার প্রাগৈতিহাসিক জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ছে পারমিয়ানের পাইন বনে।
সেই জ্যোৎস্নার আলোয় নিচের ফাঁকা জায়গাটুকুতে চলছে অপার্থিব এক নাটক। গরগনপ্সিডের শিকার করা ছোট আরকোসরটার উপর হামলা করেছে বিরাট বড় এক ডাইমেট্রডন, পিঠের বিরাট বড় পাখনাটা কেঁপে কেঁপে উঠছে তার। গরগনপ্সিড বাঘের মত খিপ্রতায় ডাইমেট্রডনটার গলা কামড়ে ধরার চেষ্টা করছে, মিস করছে বারবার।
স্তন্যপায়ীর দুই পূর্বপুরুষের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অবাক চোখে দেখছে প্রাগৈতিহাসিক অরণ্য।
৪।
প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে পারমিয়ানবাসীর উপর কেয়ামত নেমে আসে।
প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে পারমিয়ানবাসীর উপর কেয়ামত নেমে আসে।
কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না কিভাবে এর শুরু। অনেকগুলো হাইপথিসিস আছে। কারো কারো মতে, আগ্নেয়গিরিগুলোর
পারমিয়ান-ট্রায়া
ম্যামালদের রাজত্বের আশা আগামী ১৫ কোটি বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বিরাট বিরাট ম্যামাল লাইক রেপ্টাইলরা প্রায় সবাই মারা পরে এই ধ্বংসযজ্ঞে। আগামী ১৫ কোটি বছর ম্যামালরা ইঁদুর- ছুঁচোর আকৃতি নিয়ে ভয়ে ভয়ে লুকিয়ে দিন কাটাবে।
৫।
চারপাশে লাশের স্তুপ, এর মধ্যে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে ছোট একটা আরকোসর। সে পারমিয়ান সারভাইভর।
চারপাশে লাশের স্তুপ, এর মধ্যে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে ছোট একটা আরকোসর। সে পারমিয়ান সারভাইভর।
একদিন এই আরকোসরের বংশধররা ৪টা ভাগে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে সাড়া পৃথিবীতে।
এক ভাগ থেকে জন্ম হবে কুমিরদের। এরা রাজত্ব করবে নদী-নালায়।
এক ভাগ হাল ধরবে সমুদ্রের। বিরাট বিরাট মোসেসর, প্লেসিওসর এই ভাগের প্রাণী।
তিন নম্বর ভাগ দখল করবে আকাশ। আগামী ১৫ কোটি বছর এদের নাম হবে টেরোসর - আকাশের মূর্তিমান আতঙ্ক।
চার নম্বর ভাগের নাম হোল ডাইনোসর।
এক ভাগ থেকে জন্ম হবে কুমিরদের। এরা রাজত্ব করবে নদী-নালায়।
এক ভাগ হাল ধরবে সমুদ্রের। বিরাট বিরাট মোসেসর, প্লেসিওসর এই ভাগের প্রাণী।
তিন নম্বর ভাগ দখল করবে আকাশ। আগামী ১৫ কোটি বছর এদের নাম হবে টেরোসর - আকাশের মূর্তিমান আতঙ্ক।
চার নম্বর ভাগের নাম হোল ডাইনোসর।
আরকোসর কথাটার অর্থ তাই The Ruling Lizard.
ছবিঃ
১। ডাইমেট্রডন
২। গরগনপ্সিড
৩। আমার ব্যাক্তিগত সংগ্রহে থাকা ট্রাইলবাইট আর ডাইনোসরের ডিমের খোসার ফসিল। ট্রাইলবাইট পারমিয়ান extinction এ ধ্বংস হয়ে যায়।
১। ডাইমেট্রডন
২। গরগনপ্সিড
৩। আমার ব্যাক্তিগত সংগ্রহে থাকা ট্রাইলবাইট আর ডাইনোসরের ডিমের খোসার ফসিল। ট্রাইলবাইট পারমিয়ান extinction এ ধ্বংস হয়ে যায়।

0 Comments
Post a Comment