#কল্পবিজ্ঞান
.
ঘুম থেকে পুরাতন  এলার্ম  ক্লকের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে নিনোর। এক সময় যে এই ঘড়িটা অনেক জোরে আওয়াজ করত তা এখনের আওয়াজে বোঝা যায়।  যা হোক, বিছানা ছেড়ে ওঠে গোসল সেরে নেয় সে। তারপর প্রাতরাশ করে মিটিং এ যাবার সময় বের হতে দেখে গাড়ি এসে হাজির।  গাড়িটি অটোমেটিক, প্রতি মিটিং এর আগে সময় করে বিজ্ঞানীদের নিয়ে যায়। গাড়িতে বসবার সময় সেই ছবির কথা মনে হতে বাসা থেকে ছবিটি পকেটে নিয়ে গাড়িতে চেপে বসে সে।  ৫-৬ মিনিটেই পৌছে যাবে মিটিং এ। যেতে যেতে গাড়ির কম্পিউটারে নিউজের হেডলাইন চেক করতে থাকে।  একটি হেডলাইন তাকে প্রচুর হাসায়।
.
 কিছুদিন আগে ড. মরিসের সাথে অনেকটা ঝগড়ার মতো হয় নিনোর। ড. মরিস টাইম ট্রাভেলের ওপর রিসার্চ করছিলেন, তাতে নিনোকে আমন্ত্রণ করেন তিনি। নিনো বিজ্ঞানীদের মধ্যে  বয়স ও পদমর্যাদা উভয় দিক থেকে ছোট । বিজ্ঞানি মহলে প্রবেশের পর মোটামুটি টাইম ট্রাভেলের জন্য যত গবেষণার তাকে ডাকা হয়েছে সবটায় গিয়েছে সে। তবে কোনো এক্সপেরিমেন্ট ই সফল হয় নি। নিনো জানে যে টাইম ট্রাভেল সম্ভব নয়।  তাই ড. মরিসের সাথে কাজ করে নি নিনো। তবে নিনোর এক্সপেরিয়েন্স এর জন্য ড. মরিস নিনোকে অন্যদের থেকে বেশি কাছে চাইতেন। কিছুদিন আগেও বড় করে নিউজ বের হয়েছিল যে, ড. মরিস ও তাঁর  টিম টাইম ট্রাভেলের সত্যতা প্রমাণের অতি নিকটে পৌঁছে গেছেন। টাইম ট্রেভেল  নিয়ে দু'জনের দ্বিমত থাকায় বেশ কথা কাটাকাটিও হয়েছিল তাদের মাঝে।  নিনোতো অতীতের থেকে শিক্ষানিয়ে টাইম ট্রাভেলের বিপক্ষে।  আর আজকেই নিউজে সে দেখে ড. মরিস ও তার টিম বলেছেন টাইম  ট্রাভেল সম্ভব নয়।
.

মিটিং পৌছাতেই  একটি এ.আই. ওয়েলকাম জানায় তাকে। সকলেই চলে এসেছেন।  মিটিং এ নতুন একজন বিজ্ঞানী এসেছেন আজকে। তার নাম ডেলিসা লিওন্সকি। ২ বছর হল বিজ্ঞান মহলে প্রবেশ করেছে। নিনো থেকে ১-২ বছরের বড় পদমর্যাদা নিনো থেকে এক বেশি৷ সবার চেয়ে ছোট দেখে নিনোর মনে কষ্ট নেই। কারণ, তার কথায় কেউ কান দেয়না বলে মিটিং এ শুধু সে আসে আর যায়। তবে আজকের মিটিং এর মূল হলো মিস ডেলিসা। তিনি টাইম ট্রাভেলিং এর উপর রিসার্চ করছেন এবং তিনি সফল হবেন বলে আশাবাদী । এই কারণে আজকের মিটিং  বাসা। এর আগে কোখনো ইন্টারনেশনাল বিজ্ঞান সভায় টাইম ট্রেভেল নিয়ে আলোচনা করে নি। ড. মরিস ভালোমানের বিজ্ঞানী হলেও তিনি ইন্টারনেশনালশীপ গ্রহণ করেন নি৷ টাইম ট্রাভেলিং নিয়ে মিটিং হবে শোনে লেইম লাগে নিনোর, এই নিয়ে যে এই যুগে কখনো আন্তর্জাতিক সভা হবে কল্পনাও করে নি সে, মিটিং শুরু হয়। তবে নিনো চলে যায় তার ভাবনার জগতে।  এরকম ইউজলেস মিটিং শুনে কান পচাতে চায় না নিনো।
.

মিটিং শেষ। নিনো তার অফিসে বসে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। স্ক্যান করে হিউম্যান ডেটাবেইস থেকে কোনো তথ্য পায় নি সে। এমন সময় মিস ডেলিসা নিনোর সাথে দেখা করতে এল।
ডেলিসা - আসতে পারি কি?
নিনো - অবশ্যই। বসুন।
ডেলিসা - আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।
নিনো - জ্বী বলেন। আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
ডেলিসা - আপনিই কি নিনো, যার অনেক বছরের টাইম ট্রাভেলের ওপর গবেষণার এক্সপেরিয়েন্স আছে?
নিনো - হুম।
ডেলিসা - আসলে আমি আপনার সাথে টাইম ট্রাভেল নিয়ে গবেষণা করতে চাই। শুনেছি আপনি নাকি এখন এইসব নিয়ে আর গবেষণাতে ইচ্ছে নেই! ড. মরিসের সাথে কাজ করতে আপনি আপত্তি প্রকাশ করেছিলেন। অবশ্য উনার এক্সপেরিমেন্ট ফেইল হয়েছে।
নিনো - হুম আজ সকালেই পড়লাম।
ডেলিসা - আমি আমার গবেষণার কিছু পেপারস নিয়ে এসেছি। আপনি দেখেনিন। মিটিং এ তো আপনার কোনো মনোযোগ ছিল না। পেপার গুলো পড়েই দেখেন। ভালো লাগলে একত্রে গবেষণা করা যাবে।
.

এই বলে মুখে এক মলিন হাসি দিয়ে পেপারস গুলো নিনোর হাতে বাড়িয়ে দেয় ডেলিসা। পেপারস চেক করতে থাকে নিনো। একের পর এক তবে পেইজের শেষ নেই।  ভালোই গবেষণা চালিয়েছে ডেলিসা। তার গবেষণা পত্রটি অন্যদের চেয়ে আলাদা। নিনোর ভালোলাগে সেটি৷ তবে যদি এই প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়  তাহলে মিস ডেলিসা'র মনের অবস্থা কি হবে ভেবে কষ্ট লাগে নিনোর।
.

নিনো - ওকে। আমি সাহায্য করতে রাজি।
ডেলিসা - অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। তা কলকে থেকে আসছেন?
নিনো - নাহ পরশু থেকে।
ডেলিসা - কারণ জানতে পারি?
নিনো - আজ ২২শে এপ্রিল,  তাই লাইরিডস উল্কা বৃষ্টি দেখব। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হবে।
ডেলিসা - মানে? এই যুগে সরাসরি  আকাশে তাকিয়ে দেখবেন? মানে,  লাইট পলুশন তো আছেই তারওপর এত বছরে মানুষকের অসতর্কতায় বায়ুমণ্ডলে যে লেয়ার পড়েছে এতে তো ভালোভাবে তারাই দেখা যায়  না বললেই চলে।
নিনো - আমার বাসা থেকে ১ কিমি এর মতো পথ হাটলে আমার দাদার একটা জায়গা পড়ে। অনেকটা জংগলের মতো। তিনি আরটিফিশালিটি অতো পছন্দ করতেন না৷ তাই ওইখানে তেমন আরটিফিশাল জিনিস নেই। শুধু গেট টা আরটিফিশাল। তাও আমাদের পরিবারের কেউ জংগলটায় যেতে পারবে৷
ডেলিসা - ওয়াও।  আমার ও উল্কাঝড়  দেখার অনেক ইচ্ছা। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমিও কি আপনার সাথে যেতে পারি?
(প্রশ্নটি শুনে নিনো ঠুক করে ধাক্কা খেল। একজনকে প্রথম সাক্ষাতেই কোনো কিছুতে না করা যায় না। কিন্তু যদি ডেলিসা আসে তাহলে তারা ইন্জয় অরা যাবেনা। তাছাড়া সুন্দরী কেউ পাশে থাকলে কোনো কিছুতে মনোযোগ দেয়া টা বেশ কষ্টকর হয়।  তবে মানিয়ে নেয় নিনো)
নিনো - অবশ্যই আমার কোনো আপত্তি নেই। তাহলে আজ রাতে বাসায় চলে আসুন ।
ডেলিসা - ঠিক আছে।
.

এই বলে এক মিষ্টি হাসি দিয়ে রিসার্চ পেপার গুছিয়ে বিদায় নেয় মিস ডেলিসা। নিনোও বাসায় যাবার প্রস্তুতি নেয়।
.

রাত ১২ টা বাজে বারান্দায় বসে আছে নিনো। শীত শীত লাগছে তাই হাতে থাকা কফির মগে চুমুক লাগাচ্ছে সে। ডেলিসা আদৌ কী আসবে নাকি আসবে না ভাবছে সে। তবে বাসার সামনে গাড়ি থামার আওয়াজ শোনে বুঝতে পারে ডেলিসা চলে এসেছে। ডেলিসা তো প্রথমেই নিনোর বাসাকে মিউজিয়াম ভেবে বসে। বেশিরভাগই পুরাতন জিনিশ। পরে নিনো আর ডেলিসা ক্যাম্প ও স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে জংগলের দিকে রওনা দেয়।
জংগলে গিয়েই ক্যাম্প বসিয়ে স্লিপিং ব্যাগ বের করে আকাশে তাকিয়ে শুয়ে পড়ে তারা। এখন শুধু উল্কার অপেক্ষা। 
তবে নিনোর মনে আবারও ভূত চেপে উঠছে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে এর ও আগে সে কাওকে নিয়ে এমন ভাবে উল্কা বৃষ্টি দেখছিল৷  আসলেই কি দেখেছিল নাকি শুধুই মনের ভূল ভাবছে সে। ভাবতে ভাবতে ২ টা উল্কা তার চোখে পড়ে। আর ডেলিসা'র খুশি দেখে কে। প্রথম বার উল্কাঝড় দেখার  সুযোগ হয়েছে তার সাথে অনেক গুলো চেনা অচেনা তারাও ।  তবে নিনোর আর ভালো লাগছে না কারও সাথে আগেও আদৌও উল্কা বৃষ্টি দেখেছে কি না কি শুধুই কল্পনা তার মাথায় ঠেকছে না, তার কেন জানি মনে হয় সে পাগল হয়ে যাচ্ছে । ৩ নম্বর উল্কাটা বেশ বড় ছিল।  এটি দেখেই ঘুমিয়ে পড়ে নিনো।
( চলবে )