#কল্পবিজ্ঞান

"If time travel is possible, where are the tourists from the future?"
- Stephen Hawking
.
ডে - ৩
সূক্ষ্ম একটা হিসাব।  খুবই ছোট একটা গ্যাপ৷ মিলাতে পারছে না নিনো। ডান-বাম সবদিকে কল্কাঠি নাড়িয়েও কাজ হচ্ছে না। ৩য় সমস্যাটা এই সূক্ষ্ম হিসেবের জন্যই আটকে আছে৷ শুধু একটা ক্লু দরকার।  একটা ক্লু নিনোর জন্য যথেষ্ট।  অনেকবার চেষ্টা করতে থাকে সে৷ একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে পেপারস গুলো টেবিল থেকে বাতাসে ছুড়ে ফেলে দেয় নিনো৷ হাতে ঠ্যাস দিয়ে বসে আছে সে৷ দৃষ্টি অন্য টেবিলে, যেথায় সকালে নিনো ব্যাগ রেখে গিয়েছিল। হুট করে মনে পড়ে যে, তার ব্যাগে পেনড্রাইভে ড. মরিসের রিসার্চ ফাইল গুলা কপি করা আছে। সে এগুলো এখনো দেখে নি৷ পেনড্রাইভটি কম্পিউটারে লাগাল নিনো। ফাইল গুলো একে একে করে সব দেখছে সে। তবে তার মনে হতে থাকে এই খানে তার সমস্যার সমাধানের কোনো ক্লু পাবে না।
.
মরিসের কাজ গুলো লেইম৷ তাই ভালো ভাবে না দেখে মরিসের টিমের ফাইলে ঢু মারে নিনো। চেক করতে করতে হতাত একটা জায়গায় চোখ আটকে যায় নিনোর৷ বিষয়টা অনেকটা নিনোর সমস্যার মতই তবে একটু ভিন্ন। আর সেই সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াটি নিনোর অনেক চেনা। সমাধানের প্রতিটি পদ নিনোর খুবই পরিচিত। তবে তা মনে করতে পারছে না সে।  কার তা ভাবার সময় নিনোর নেই। তবে নিনো তার ক্লু পেয়ে গেছে। এই কাজটি পুরোটাই ক্লু। কাজটা যে কে করেছে জানলে ভালো হতো নিনোর৷ কারন যেই করুক না কেন তার আসলেই ট্যালেন্ট আছে৷ ছুড়ে ফেলা পেপারস গুলো একত্র করে সে। কম্পিউটারের ফাইলের তথ্য সহ আবারও টেবিলে বসে নিনো। এই একটাই ক্লু। আর সর্বশেষ প্রচেষ্টা। সমস্যাটির আবার গোড়া থেকে সমাধানের শুরু করে নিনো। সব মিলিয়ে আসেতে আসতে আবারও আটকে যায় সে সূক্ষ্ম সমস্যাটিতে। এইবার ক্লু সহ চেষ্টা করে। সমাধানের পথে চলে এসেছে সে৷ একটু,  আরেকটু এই বুঝি সমাধান হল। চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে সমাধান।  অবশেষে সমাধান হল। স্বস্তির এক বড় নিশবাস ফেলে নিনো। এতক্ষণে অবশ্য ভোর হয়ে গিয়েছে।  টাইম মেশিনের সামনে গিয়ে ছোট খাটো কাজ গুলো সেরে ফেলে সে। যা পূর্বে অনেকে বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা করতে পারে নি, নিনো সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছেন সব কাজ শেষ।  এবার শুধু টাইম ট্রাভেল করার পালা।
.

টাইম মেশিনে টাইম সেট করে সে। এখন ভোর ৭টা বাজে। ঠিক যে সময়ে ডেলিসা সহ অন্যান্যরা ল্যাব থেকে বের হচ্ছিল তার ঠিক ৫ মিনিট আগে। এবার মেশিন চালু করবার পালা। তার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুর ঘুর করছে৷ মেশিন চালু হবে কি হবে না, টাইম ট্রাভেল সত্যিই কি হবে নাকি হবে না, যদি কোনো সমস্যা হয় ইত্যাদি। তবে তাকে আজ ট্রাভেলে সাকসেস হতেই হবে। শ্বাস আটকে ট্রাভেলের সুইচে চাপ দেয় নিনো। চালু হবার কিছুক্ষণ পরেই চারদিকে সব কাপতে থাকে।  নিনো একটু ভয় পেয়ে যায়। আর তার মাথা ভো ভো করতে শুরু করে। নিনো চোখ বন্ধ করে দু'হাত হাত দিয়ে তার মাথা শক্ত করে ধরে রাখে। চারদিক এখনো কাপছে। একটু করে চোখ মেলে দেখে, চারদিকে অন্ধকার কিছু দেখছে না সে। তবে সব কিছু এখনো কাপছে। আবার চোখ বন্ধকরে ফেলে সে। এরপর কি হল কিছুই জানা নেই নিনোর।
.
আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিনো। গত রাতে অফিসে তার চেয়ারে যেভাবে বসে ছিল ঠিক সেভাবে বসে আছে সে। মাথা এখনোও ভো ভো করছে৷ ঘড়িতে সময় দেখে সে। ট্রাভেল সাকসেস। রাত ১০টা ৫৫ বাজে আর ৫ মিনিট পর তারা ল্যাব ছাড়বে৷ অনেকে মারা যাবে। অফিস থেকে বের হয়ে যায় নিনো, সকল কে জানাতে হবে। কেউ যেন ল্যাব থেকে বের না হয়। অনেক বড় ভবন। নিনোর ফ্লোরে কাউকে না পেয়ে নিচের ফ্লোরে যায় সে। সেখানে প্রথমেই চোখে পড়ে প্রোফেসর হ্যারিকে। নিনোর মনে পড়ে হ্যারিও মারা যায় সেদিন। সামনে গিয়ে তাকে ডাক দেয় নিনো। তবে হ্যারি কোনো রিপ্লাই দিল না৷ নিনো আরো কয়েকবার ট্রাই করে।  কোনো লাভ হল না৷ নিনোকে যেন সে পাত্তাই দিচ্ছে না। নিজের কাজ আপন গতিতে করে যাচ্ছে হ্যারি। হ্যারির পেছনে সময় অপচয় না করে অন্য জনকে খোঁজে নিনো। সামনে মিস জিলি কে পেয়ে যায় সে। এখানেও সেইকই ঘটনা ঘটে। জিলিও যেন নিনোকে পাত্তা দিচ্ছে না। নিনোর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তার মনে হয় কেও তাকে শোনতে পাচ্ছে না। দেখতে পাচ্ছে না৷ তবে হেরে যাবার পাত্র নিনো নয়৷ এইসময় দেখে ডেলিসা লিফটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিনোও ডেলিসার পেছনে ধাওয়া করে৷ ডেলিসার সাথে সেও লিফটে উঠেপড়ে৷ লিফট নিচে নামার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিনো ডেলিসার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে৷ তবে কোনো লাভ হয় না। নিনোর এখন কাদো কাদো অবস্থা। লিফট থেকে বের হবার সময় নিনো ডেলিসার হাত ধরে আটকানো চেষ্টা করে। তবে তার হাত ডেলিসার হাতের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসে। অবাক হয় নিনো। নানা ভাবে ডেলিসাকে ধরতে চাইল সে, এমন কি ডেলিসার হাটার পথে সামনে এসে দাড়িয়ে রইল। তাও লাভ হল না৷ ডেলিসা নিনোর একপাশে এসে শরীরের অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল৷ কষ্টে চিৎকার করতে থাকে নিনো। কেউ তাকে দেখছে না, শোনছে না। যেন সে কিছু থেকে আলাদা হয়ে আছে৷ শুধু সময়ের সাথে সকলের পরিবর্তন দেখছে সে৷ হাতে ১ মিনিট সময়। কি করবে তা নিয়ে ভাছে  নিনো। .
লিফট থেকে ডেলিসার পর নেমে আসে মিস মেলিকা। মেলিকা কে দেখে ড. স্যাম এগিয়ে যায়।
স্যাম - হাই মিস মেলিকা। আপনাকে উইয়ার্ড দেখাচ্ছে যে?
মেলিকা - হাই৷ আসলে একটা বাজে জিনিস দেখলাম। ঠিক কি বুঝতে পারলাম না।
স্যাম - কোনো স্বপ্ন কি?
মেলিকা - হয়তো৷ কোনো দুঃস্বপ্ন হবে হয়তো।
স্যাম - তাই? তা কি দেখলেন বলে ফেলুন। কোথায় যেন পড়েছি, খারাপ স্বপ্ন দেখলে তা বলে ফেলা উচিত। তাহলে নাকি তা ফলার সম্ভাবনা কমে যায়।
মেলিকা - আপনি এই যুগেও কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন?
স্যাম - হাহা নাহ। তবে বলতে তো আপত্তি নেই।
মেলিকা - আসলে দেখলাম আমি সহ অনেকে মারা গিয়েছি৷
স্যাম - কি!!! এ কিভাবে সম্ভব!!
মেলিকা - কেন কি হয়েছে?
স্যাম - আমিও যে একটু আগে একই জিনিস দেখলাম! দু'জন একই জিনিস কিভাবে দেখে!
এমন সময় মিস আস্ট্রেয়া তাদের দিকে এগিয়ে আসে।
আস্ট্রেয়া - কি বেপার! কি নিয়ে কথা হচ্ছে?
মেলিকা - আসলে আমরা দু'জন একই দেখেছি।
আস্ট্রেয়া - কি দেখেছ?
মেলিকা - আমরা মারা গিয়েছিলাম। তবে এটা স্বপ্ন ছিল না। মনেহয় জাগ্রত হয়েই দেখেছি।
আস্ট্রেয়া - হোয়াট!! আমিও তো  একটু আগে একি জিনিস দেখলাম৷
মিস আস্ট্রেয়ার স্বামি প্রোফেসর হান কোথা থেকে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
আস্ট্রেয়া - উফ্ হান। সকলের সামনে এটা কি করছ।
হান - যাই করিনা কেন। একটা ভয়ংকর জিনিস দেখে তোমাকে সারা বেইসমেন্ট খুজে এলাম। আর তুমি এখানে?
আস্ট্রেয়া - কি দেখলে শুনি?
হান - তুমি মারা গিয়েছিলে। মেঝেতে তোমার ডেড বডি পড়ে ছিল
 এ কথা শোনে আস্ট্রেয়া, মেলিসা, স্মিথ নির্বাক যায়।
.

দৌড়াচ্ছে ডেলিসা, কোথা হতে যেন গুলি ছুটে আসছে। প্রথমে পারপায় সে। পরে বুকে গুলি লাগে। চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। তার চোখ ও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে। ভয়ার্ত অবস্থায় চোখ মেলে সে। দেকে ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে দাড়িয়ে আছে ডেলিসা। কি দেখল সে এটা? কোনো স্বপ্ন কি? ডেলিসাকে এরূপ অবস্থায় দেখে তার কারণ জানতে চেলে সে তা খুল বলে।  আজব ব্যাপার।  ল্যাবের সকলেই এমনটি দেখেছে৷ এটি স্বপ্ন নয় তা ডেলিসা নিশ্চিত।  তবে এটা কি তা সে মিলাতে পারছে না। এমন সময় প্রফেসর ডেভিড বলে ওঠে,
ডেভিড - আচ্ছা যা হবে হোক না। এখন বেরিয়ে পড়ি। বের হলে যে মারা পড়ব এটা তো আর নিশ্চিত নয়।
ডেলিসা - ওয়েট স্যার ডেভিড।  একটা জিনিস লক্ষ করেছেন কি?
ডেভিড - কি জিনিস?
ডেলিসা - যারা যারা পার্টিতে যাবার কথা তারা তারা মরতে দেখেছে৷ আর যারা থাকার কথা তারা দেখেছে ডেড বডি।
ডেভিড - তো?
ডেলিসা - আমার মনে হয়। আমাদের বের হবার আগে একটু চারপাশ দেখে নেওয়া উচিত। সিসি ক্যামেরার রুমে গিয়ে চারপাশে দেখা যেতে পারে৷ যদি কিছু পাই।
.
ডেলিসা সহ আরো অনেকে সিসি ক্যামেরা রুমে যায়৷ নিনোও তাদের পেছে পেছনে চলে। তবে তার মনে পড়ে সেই রেলওয়ের কথা! তারও মনে হয়েছিল সে ট্রেনের সাথে ধাক্কা খায়। পরে দেখে ট্রেন অনেক দূর থেকে আসছিল৷ তবে তা এখন ভাবতে চায় না নিনো। তারা কি করবে তা দেখার আসায় আছে সে। সিসি ক্যাম রুমে গিয়ে দেখ গার্ড ঘুমুচ্ছে৷ তাকে অনেকেই ঝাড়ি দিয়ে তোলে। পরে দেখে সিসি ক্যামেরা কম্পিউটার স্ক্রিনে কালো হয়ে আছে। তাদের আর বোঝার বাকি থাকেনা যে এইখানে আসলেই কোনো অঘটন হতে চলছিল। তাড়াতাড়ি করে ডেলিসা ভাবনের এলার্ট বাটনে-এ টিপ দেয়। সাথে সাথে ভবনটি লক হয়ে যায়। আর টাস্ক ফোর্স  খবর পেয়ে তাদের টিম নিয়ে ছুটে আসে।
.
টেরোরিস্টরা অপেক্ষায় আছে  । কিন্তু এখনোও একজন বের হল না। ভবনের আওয়াজ শোনে বুঝতে পারে সায়েন্টিস্টরা ভেতর থেকে সতর্ক হয়ে গিয়েছে। তারা পালিয়ে যেতে চাইল, তবে এতক্ষণে টাস্ক ফোর্স এর লোকেরা চলে এসেছে। ধরা পড়ে যায় তারা। পরে টাস্ক ফোর্স -এর প্রধান ভেতরে এসে তাদের সিকিউরিটি নিশ্চিত করে। প্রত্যেকে এবারের যাত্রায় বেচে যায়।  স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারা। নিনো শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে সব। ভবনের সকলে এরপর বাড়ির দিকে রওনা দেয়।  এমন ঘটনার পর কারো পার্টিতে যাবার ইচ্ছে থাকে না।
.
ভবন থেকে বের হয়ে যাবে নিনো এমন সময় এটেনডেন্ট এর দিকে চোখ যায় নিনোর। সকলের নাম লিস্ট-এ আছে। শুধু তার নামটি নেই। তবে তার মনে কোনো কষ্ট নেই। কারণ ডেলিসা সহ সকলে বেঁচে গিয়েছে। নিনো বের হয়ে যাচ্ছে এমন সময় ডেলিসার মনে হয় বের হবার গেটে কেউ আছে,  সেদিকে তাকায় সে । নিনোও ডেলিসার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। তার পর "গুড বাই" বলে বেরিয়ে যায় নিনো।
.
রাস্তার ধারে হাটছে নিনো। অনেক রাত হয়েছে। এখন বাসায় যাবে। লক্ষ করে তার শরীরের থেকে সোনালী রঙের কি যেন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তার শরীর একটু পর পর হালকা হয়ে যাচ্ছে।  হিসাব কষে বের করে সে, ঠিক সে সময় টাইম ট্রাভেল করেছিল সেই সময়ের মধ্যে তার পুরো
  শরীর হালকা হয়ে মিলিয়ে যাবে। তার অস্তিত্বই আর থাকবে না নিজের কাছে। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে নিনো। অনেক ক্লান্ত সে। এখন তার দরকার শুধু একটা ঘুম।
( চলবে )