#কল্পবিজ্ঞান


“Time is the only thief we can’t get justice against.” – Astrid Alauda.
.
অনেক কষ্টে পানি পান করে নিনো। গ্লাস ধরার অনেক চেষ্টা করেও প্রথমে ব্যার্থ হয়। পরে সময় নিয়ে হাতের মধ্যে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে গ্লাসে ধরে পানি পান করে সে। শরীর আরও হালকা হয়ে এসেছে তার। শোতে যায় সে। তবে ভালোভাবে ঘুমাতে পারছে না। বিছানায় পড়ে এদিক সেদিক ছটফট করছে। পরে আস্তে করে ক্লান্ত চোখে ঘুম নেমে এল তার।
.
বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারে নি। ৬টায় ঘুম ভেঙে যায় । শরীরের অবস্থা করুন । ঘুম থেকে ওঠে হাতের দিকে তাকালো নিনো হাতের ওপারে কি আছে তা অনেকটা পরিষ্কারই দেখাযাচ্ছে। ৭টায় টাইম ট্রাভেল করেছিল সে৷ হয়তো চিরতরে বিলিন হয়ে যাবার জন্য হাতে আর ১ ঘণ্টা সময় আছে। এই ১ ঘন্টা কি করবে তা ভাবছে নিনো। ঠিক করে সেই রেলওয়ের রেললাইনে যাবে। যেখান থেকে হয়তো এই সব শুরু হয়েছে৷ দরজার সামনে এসে খুলতে গিয়ে ভাবে, দরজা খোলার চেষ্টা করে কি লাভ, রাতে লক করে নি। দরজার একপাশে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয় সে৷ নিনো নিজেকে ভুত বলে দাবি করলেও কোনো অসুবিধা নেই। ভুতের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সে। অতৃপ্ত আত্মাও বলা যায়। তাকে কেউ দেখছে না, শুধু এটাই ভূতুরে। যাওয়ার পথে নানান কথা ভাবছে সে। সারা জীবনের ইতিহাস স্মরণ করছে নিনো। ছোটবেলা থেকে আজ পর‍্যন্ত সব রকম কথা। অনেক ধীরে হেটে হেটে সেই রেললাইনের সামনে আসে নিনো৷ আস্তে হাটায় অনেক সময়ও কেটে যায় তার। ৬টা বেজে ৫০ মিনিট। নিনোকে অলমোস্ট অন্ধ মানুষ বলা জায়৷ চোখে তেমন কিছুই দেখছে না। খুবই কম। সেই রেললাইনটার উপর বসে আসে সে। বসে থেকে গত রাতের ঘটনা এবং ওই দিন তার সাথে রেললাইনে ঘটে যাওয়া ঘটনার মিল খোজার চেষ্টা করছে। অবশ্য ভাবার অবস্থায় একটি ট্রেন তার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। সে ভাবছে যদি রেলের ঘটনাটি রিসার্চ সেন্টারে হয় তাহলে কি তার ব্যাপারটাকে কাকতালীয় বলে ধরে নেবে। আর যদি কাকতালীয় না হয় তাহলেতো হিসেব মতে সে প্রথম টাইম ট্রাভেলার নয়। তারও আগে কেউ টাইম ট্রাভেল করেছে। কিন্তু কে? তারও কি একই অবস্থা হয়েছে? এই সব ভাবতে ভাবতে কি মনে করে নিনো পকেটে হাত দিল। থেকে পকেটে সেই ছবিটা রয়ে গিয়েছে৷ ট্রাভেলের বের করতে মনে ছিল না। ছবিটারও ঠিক নিনোর মত অবস্থা, হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। নিনোর চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে৷ নিজেকে নিজে দেখতে পাচ্ছে না সে। না পারছে অনুভব করতে। যেন সময়ের সাথে আপন গতিতে মুছে যাচ্ছে নিনো। যেন টাইম ট্রাভেল করা ছিল সময় ও প্রকৃতির বিপরীত। হয়তো এটিই তার অভিশাপ। ৭টা বেজে গেছে। যেন চিরতরে হারিয়ে গেল নিনো। কে নিনো? কিই বা তার পরিচয়। আদৌও কি নিনো বলে কেউ আছে? নাকি সবই ফল্স মেমোরি? হয়তো এইভাবেই লিখাছিল তার জীবনের শেষ পরিণতি।
.
সকাল থেকেই কেমন জানি অসবস্থি বোধ করছে ডেলিসা। ল্যাবে কাজ করার সময় তার বার বার মনে হচ্ছে, সে ও তার ল্যাব মেম্বারস ছাড়াও ল্যাবে কেউ একজন ছিল। কিন্তু কে তাই বের করতে পাছে না সে। টাইম ট্রাভেলের মত এত বড় একটা প্রজেক্ট তার একা সামলানো সম্ভব নয়। এমন সময় বিজ্ঞান কাউন্সিলে মিটিং এর ডাক আসে। ডেলিসা সেখানে চলে যায়। মিটিং মূলত গতকালের বিষয়টি নিয়ে। কিভাবে সবাই একই ধরনের জিনিস দেখল, যা হতো ঘটে যেতে পারত। একেক জন একেক রকম ধারণা দেয়। কেউ কেউ তো সৃষ্টিকর্তা তাদের বাচানোর জন্য ভবিষ্যৎ দেখিয়ে দিয়েছে বলে বিশ্বাস আনে। এমন সময় মিস আস্ট্রেয়া বলে ওঠে, " উফফ, ও থাকলে ভালো হত। " মিটিং এ সবায় তার দিকে তায়। ডেলিসা বলে, " কে থাকলে? মিস আস্ট্রেয়া। "
আস্ট্রেয়া - ইয়ে মানে আসলে ঠিক মনে পড়ছে না, তবে সকাল থেকে কে যেন আমাদের মাঝে নেই নেই মনে হচ্ছে। আবার ঠিক কে নেই তাও বলতে পারছিনা না।
ডেলিসা - আসলে আমারো ল্যাবে কাজ করার সময় এই জিনিসটা মনে হচ্ছে। যেন কোনো বিশেষ কেউ আমার সাথে ল্যাবে ছিল।
ডেলিসা বলার পর আরো অনেকে জানায় তাদেরও এমনটাই মনে হচ্ছে।
এমন সময় মিটিং এর হেড সায়েন্টিস্ট আলবাস ডেলিসাকে বলে, " মিস ডেলিসা, আপনি টাইম ট্রাভেল নিয়ে কাজ করছেন না? আর আপনার ল্যাবে কেউ নেই নেই মনে হচ্ছে? "
ডেলিসা - জ্বি।
আলবাস - আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না যে, গতকালের সাথে টাইম ট্রেভেল এর কনো মিল আছে?
ডেলিসা - আমিও এতক্ষণ ধরে একই কথা ভাছি। আমার মনে হয় যাকে আমাদের মিসিং মনে হচ্ছে সে কোনো ভাবে টাইম ট্রাভেলে সাকসেস হয়েছে।
আলবাস - কিন্তু তাকে মিসিং কেন মনে হচ্ছে?
ডেলিসা - সেটাই তো মিলাতে পারছিনা। ঠিক কি ঘটেছিল যার ফলে আজ সে মিসিং। যে টাইম ট্রাভেল করেছে সে সরাসরি সে দিন আমাদের কাউকে কিছু বলে নি। তাহলে কি সে ট্রাভেল করেই হারিয়ে গেল? কোনো সাক্ষাৎ ছাড়া! যেহেতু আমাদের পরিচিত একজন মিসিং তাই আমাদের বাঁচানোর জন্যই যে সে টাইম ট্রাভেল করছে সেটা ধরা যেতে পারে।
আলবাস - হুম। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?
যে তাদের বাঁচিয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কি করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকেই নানা মতামত দেয়। তবে কোনো কূল পায় না। ডেলিসা কিছু বলতে পারছে না। ভাল ভাবনা নিয়ে আসার জন্য সময় লাগবে তার। আজ সারাদিন মিটিং চলে। কোনো ভালো ক্লু পায় নি তারা। তবে মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেয় যে, টাইম ট্রাভেলার কে ফিরিয়ে না আনা
পর‍্যন্ত মিটিং অব্যাহত থাকবে। আর যারা বর্তমানে যে বিষয়ে কাজ কছে তারা ট্রাভেলার কে না পাওয়া পর‍্যন্ত সব বন্ধ রাখবে।
.

মিটিং শেষে বের হয় ডেলিসা। গাড়িতে উঠবে এমন সময় রাস্তার বা দিকে চোখ যায় তার। যতদূর মনেপড়ে সে দেকে ডেলিসা যায় নি। কি মনে করে আজকে সেদিকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার কেন যানি মনে হচ্ছে এদিকটায় সে আগে গিয়েছে। ডেলিসার স্মৃতি শক্তি প্রখর। তবে আজকে গাড়িতে না, হেটে হেটেই যেতে ইচ্ছে হয় তার। অনেকক্ষণ হাটার পর খেয়াল করে সে এই দিকটায় অতো আধুনিকতা আসে নি। হাটতে হাটতে চোখের সামনে একটি বাড়ি পড়ে। পুরাতন অতো আধুনিক নয়। তার মনে হয় এই বাড়িতে সে আগে এসেছে৷ দরজার সামনে নাম লিখা আছে এল. নিনো। ডেলিসা আগেও নামটি শুনেছে, কিন্তু কে মনে পড়ছে না। নক করতেই নিজেনিজেই দরজাটি খুলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করে সে। খুবই পরিচিত লাগে তার। প্রথমেই পড়ে, পুরাতন কালেকশন, ডেলিসা নিশ্চিত সে আগে এগুলো দেখেছে। টেবিলে চোখ যেতেই সে ঘাটাঘাটি শুরু করে দেয়। টেবিলে টাইমের উপর নানা বই আছে, নানা পেপারস আছে টাইম ট্রাভেলের উপরে গবেষণার। পাশের রুমে যাওয়া মাত্র একটা ছবি তার চোখে পরে। দেওয়ালে বাধা। ডেলিসা তাকে চেনে। কিন্তু মনে আসছে না। ডেলিসা ভাবছে, " আচ্ছা উনিই সেই টাইম ট্রাভেলার নয়তো? " সে ছবিটির একটি ছবি তুলে নেয়৷ যেকরেই হোক একে ফিরিয়ে আনতে হবে। কি করবে ভাবছে সে। তার পরবর্তী কাজের জন্য টেবিল থেকে পানির গ্লাসটি নিয়ে নেয়। বাড়ি যাবার জন্য বের হচ্ছে সে৷ আজ সারারাত এই মানুষ কে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো উপায় করতেই হবে।
.
যথা সময়ে মিটিং শুরু হয়। একেক জন নানান উপায় বলে৷ কারোটাই তেমন গ্রহণ যোগ্য নয়। সব শেষে আসে ডেলিসার বলার পালা।
আলবাস - মিস ডেলিসা, আপনার কাছে আজ কোনো উপায় আছে কি?
ডেলিসা - জ্বি। আপনারা কি এই ছবির মানুষটাকে চিনতে পারছেন? ( গতকালের তোলা ছবি)
ছবি দেখাতেই সকলে জানালো ছবির মানুষকে আগে দেখেছে। কিন্তু কেউ মনে করতে পারছে না।
ডেলিসা - উনি সম্ভবত নিনো। আমার মনে হয় উনিই সেই ট্রাভেলার। আমাদের মেমোরি সময়ের সাথে তাকে হারিয়ে ফেলছে।
আলবাস- কিন্তু একরে ফিরিয়ে আনবে কিভাবে?
ডেলিসা - আমার কাছে তার ডি.এন.এ আছে। তার পানি খাবার গ্লাস থেকে নিয়েছি । কিভাবে সে এক লম্বা ইতিহাস, তা বলে সময় অপচয় করতে চাই না। একটা যন্ত্র বানাতে হবে অনেকটা টেলিপোরটেশানের মত আগে ডি.এন. এ দিয়ে তাকে কোনো উপায়ে ডিটেক্ট করতে হবে। তারপর সে যে খানে থাকুক না কেন। তাকে খুজতে হবে। তারপর তাকে এই যন্ত্র দিয়ে ফিরিয়ে আনব৷ সে আমাদের এই জগতে নেই। কোনো ভাবে অন্য জগতে হারিয়ে গেছে৷ তাই আমাদের মেমোরি থেকে সে মুছে যাচ্ছে৷ কে জানে কেমন জগতে আছেন তিনি। সে জগৎ অভিশপ্ত নাকি সুখময়! তিনি বেঁচে আছেন নাকি নেই। কে জানে কেমন আছেন তিনি। আমার কাছে শুধু এই উপায়টি আছে।
আলবাস - অকে ডেলিসা৷ কেউকি তার বিপক্ষে আছেন?
( কোনো রেস্পনন্স নেই )
আলবাস - ঠিক আছে। সকলেই আহলে ডেলিসাকে সম্মতি জানালেন ।
ডেকিসাকে এই প্রজেক্টের প্রধানের দায়িত্ব দিলাম। আশাকরি আমাদের এই টাইম ট্রাভেলার কে শিঘ্রী ফেরত পেতে যচ্ছি।

এই বলে মিটিং শেষ হয়। আজকে থেকেই কাজ শুরু করে দেয় তারা। যেকরেই হোক এই টাইম ট্রাভেলার কে তারা ফিরিয়ে আনবেই।
( চলবে )
বি:দ্র:  এই পর্বে শেষ করতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে তাই পরের পর্বে ইতি টানব ইনশাআল্লাহ।
Let's end it with lucky 7!!