#কল্পবিজ্ঞান
.
অনেকটা উদাসীন হয়ে হাঁটছে এল নিনো। মাথায় ঘোরাঘুরি করছে নানা চিন্তাভাবনা। ২১৩৬ সাল পৃথিবী অনেক আধুনিক। হাঁটতে হাঁটতে রেল লাইনে উঠে পড়ল সে। নিরাপত্তাও এখন অনেক উন্নত। কোনো সমস্যা নেই বললেই চলে। নিনো একজন বিজ্ঞানী তাই তার সকল জায়গায় প্রবেশের অনুমতি আছে। রেল চলার সময় ও সে রেল লাইনে থাকতে পারবে কারণ সিস্টেম জানে যে বিজ্ঞানীরা ভুল করেন না। যাই হোক, নিনো বেখেয়ালি হেঁটেই চলছে হটাৎ খেয়াল করল একটা ট্রেইন চলে এসেছে। অতি নিকটে এসে গেছে! ট্রেনের নাম্বার টা ভালোভাবে দেখে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে! বড় বড় শ্বাস ছেড়ে হাপিয়ে উঠছে ট্রেনের আওয়াজ আর গন্ধ ছাড়া অন্য একটি গন্ধ আসছে তার নাকে, অনেকটা ভয়পেয়ে রেল লাইন থেকে পা সরাতে পারছে না সে! ট্রেনের সাথে ধাক্কা খাবে-খাবে এমন সময় মনে হল কে যেন তাকে ডাকছে। মনে মনে ভাবছে এই ভাবে লিখাছিল তার মৃত্যু?
.
কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে অস্থির অবস্থায় চোখ মেলল সে। চোখ মেলে অবাক হয়ে দেখে কিছুই হয়নি! রেল লাইনে দিব্যি দারিয়ে আছে সে! কি হলো? কোনো স্বপ্ন দেখল কি না, তা ভাবছে! হয়ত বেশি ক্লান্ত হয়ে উল্টো-পাল্টা দেখছে সে। সামনে দূর থেকে একটা ট্রেন ঠিকই আসছে। লাইন থেকে নেমে পড়ল সে। রেলটা তাকে পাড় করে যাবার সময় ট্রেনের নাম্বার টা তার নজর কাটে , আজব! সেই একই নাম্বার! কাকতালীয় ব্যাপার ভেবে উড়িয়ে দেয় নিনো। খুবই ক্লান্ত সে, বাসায় যেতে হবে। আগামীকাল বিজ্ঞান সভা আছে।
.
বাসায় আসতে যানবাহন ব্যাবহার করা যেত তবে সে হাটতে ভালোবাসে, অবশ্য আজকাল হাঁটাহাঁটি ও অস্বাভাবিক কাজ, কেউই তেমন হাঁটে না। তবে কাজ কম করে মোটা না হবার জন্য নানা ট্যাবলেট রয়েছে, তা নিনোর অপছন্দ। তাই যানবাহলে কম চড়ে একটু বেশিই হাটে সে। এই ১২ প্যাক বডিকে ২৪ প্যাক বানাতে চায়না নিনো।ছেলেটা সৌখিনও বটে বাসায় অনেক পুরাতন জিনিস ও রাখে৷ আর পকেটে মানিবেগ! তাতে অতি পুরাতন টাকা রেখেছে সখের বশে। অবশ্য সব কালেকশনই তার দাদার দাদার আমলের, তার দাদা আর বাবার এই শখটা তারও হয়েছে। এযুগে সবই ইলেকট্রনিক সিস্টেম। এত আর্টিফিশিয়ালিটি নিনোর ভালো লাগে না। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে গিয়ে কি যেন একটা পড়ে যায়৷ সে তুলতে গিয়ে অবাক! এটা কার ছবি? তাও কোনো এক মেয়ের! আগে-তো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না, তবুও মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে তার! কে এই মেয়ে? এই যুগে আবার পাসপোর্ট সাইজ ছবি! তবে এটা কোনো পুরাতন ক্যামেরা ক্যামেরা দিয়ে তোলা সেটা নিশ্চিত। পাশের রুমে গিয়ে তার পুরাতন কালেকশনের ক্যামেরাটা চেক করে সে। সপ্তাহখানিক আগে ঠিক করেছে এটি। মেয়েটির ছবি দেখে মনে হয় এই ক্যামেরায় তোলা। মেয়েটি দেখতে আসলেই সুন্দর। তবে, এটি যদি তার ক্যামেরাতেই তোলা হয়, তবে নিজের ছবি কেন আগে নয়? এই কি ছবি তার ক্যামেরা দিয়ে তোলা নাকি অন্য কারো ? আর কিভাবেই বা এই ছবি তার পকেটে এলো? ট্রেনের উদ্ভট ঘটনার পর এসব ভাবতে ভালো লাগছে না নিনোর। পরে মেয়েটির ব্যাপারে হিউম্যান ডাটা-ব্যাইস থেকে জেনে নেবে ভেবে ঘুমাতে গেল সে। আগামীকাল সকাল সকাল মিটিং এ যেতে হবে। তবে ঘুমানোর চেষ্টা করতে চাইলেও আজকের রহস্যময় ট্রেন ও ছবিটা ভাবাচ্ছে তাকে। ভাবতে ভাবতে নিনো চলে যায় গহীন ঘুমের রাজ্যে।
.
(চলবে)