বহুকাল আগে থেকেই ভারত রহস্যময়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ এই রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। ভারতীয় সাহিত্যে, লোকগানে, গল্পে, ধর্মে সবখানেই রহস্যের ছড়াছড়ি। তাঁর উপর আছে অশিক্ষা আর কুসংস্কার এর মেলবন্ধন যা কিনা আবার কোন অব্যাখ্যাত ঘটনার গায়ে রহস্যের তকমা লাগানোর সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। ভারতীয় যোগী-সন্নাসীরা আজও, এই আধুনিক যুগে বিভিন্ন রহস্যময় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন আর মানুষের ধারণা তারা বিভিন্ন ধরনের অব্যাখ্যাত শক্তির অধিকারী হয়েছেন সাধনার দ্বারা।



কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেই কিছু রহস্যময় ঘটনা আর স্থানের পরিচয়। আর ভাই-বোনেরা শুরুতেই বলে রাখি, বিশ্বাস অবিশ্বাস সবই যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। কারও জোর করে বিশ্বাস করার কিছু নেই আর কেউ বিশ্বাস করলে তাকে বেকুব বলে হাসি দেবারও কিছু নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে রহস্যে বিশ্বাসী। আমার মনে হয় ব্যাখ্যার অতীত কিছু ঘটনা আজও আছে বিধায় পৃথিবীটা এখনো পানসে হয়ে যায় নি। সৃষ্টিকর্তা রহস্যময় পথে কাজ করেন সবসময়, তিনি আমাদের সামনে রহস্য রেখে দেন যাতে মানুষ বুঝতে পারে তাঁর থেকেও সুপিরিয়র অস্তিত্ব বর্তমান, আর তিনি এমন কিছু ঘটাতে পারেন যা ব্যাখ্যা করা মানুষের অসাধ্য। আমার কাছে প্রাকৃতিক রহস্যগুলো সবসময় সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার নিদর্শন বলে বিবেচিত।

হিমালয় রহস্য (অমর মানুষ, ইয়েতি, যোগী, ভূত, লোহিত তুষার)

হিমালয় রেঞ্জ যতটা বড় ঠিক তত বেশিই এর রহস্যের পরিমান। হিমালয় অমর এক প্রজাতির আবাস এমন ধারণা করা হয়। তিব্বত এবং নেপালের হিমালয়ান পার্টে ইয়েতি নামক কুৎসিত তুষারমানবেরা বসবাস করে বলে ধারণাটা জনপ্রিয়। অনেক পর্বতারোহী রহস্যজনক লোহিত তুষার দেখেছেন বলে ঊল্লেখ করেছেন। দেখে নাকি মনে হয়, বরফের উপর রক্ত বা লাল কোন কিছু স্প্রে করা হয়েছে, যার ফলে ছোপ ছোপ লাল দাগ ফুটে উঠে তুষারের উপর। হিমালয়ের গোলকধাঁধা সমতুল্য অঞ্চলে লুকানো আশ্রমে রহস্যময় ধ্যানী যোগীদের অসংখ্য গল্প প্রচলিত আছে (আসলে কি সেগুলো শুধুই গল্প!! এত গল্পের অল্প কিছু অংশও যদি সত্যি হয়ে থাকে তাতেই এনাফ। দুনিয়ার এত জায়গা থাকতে ওই হিম ঠাণ্ডার মধ্যে বসে কিসের এত ধ্যান তাদের!! আমার মনে হয় যে, ধ্যানের উচ্চতর লেভেলে উঠে গেলে মানুষ এমন কিছু জিনিস অর্জন করতে সক্ষম, যা সাধারনের কাছে জাদুর সমতুল্য এবং সেগুলোর ব্যবহার খুব বিপদজনক। তাই এত লুকোচুরি। ভাবতে কিন্তু আমার ভালই লাগে)। হাজার হাজার মানুষ পর্বতের শিখর ছোবার অভিপ্রায়ে মৃত্যুবরণ করেছে এই হিমালয়ে। ইন্ডিয়ান আর্মির সৈন্যরা মৃত পর্বতারোহী আর সৈন্যদের দেখেছেন বলে দাবি করেছেন অনেকবার।

কুলধারা- রাজস্থান (ভূতের গ্রাম)

কুলধারা গ্রামটা ;ভূতের গ্রাম, বলে খ্যাত যা কিনা ১৮২৫ সাল থেকে পরিত্যাক্ত। গ্রামবাসীরা যারা এই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়, তাদের অভিশাপ বহন করে চলেছে গ্রামটা। কুলধারা পশ্চিম রাজস্থান এর জয়সলমীর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। গ্রামটা এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। গ্রামটা পলিওয়াল ব্রাহ্মণদের দ্বারা ১২৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যারা ছিল খুব ধনী গোত্র এবং তাদের ব্যাবসায়িক আর কৃষিসংক্রান্ত জ্ঞানের জন্য সর্বজনবিদিত ছিল। কিন্তু ১৮২৫ সালে কুলধারা এবং এর আশেপাশের আরও ৮৩ টি গ্রামের অধিবাসীরা এক রাতের ভিতরেই উধাও হয়ে যায়। স্রেফ উধাও। কারও কোন টিকিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। লোকগাথা অনুযায়ী, রাজ্যের মন্ত্রী সেলিম/সালিম সিং, একবার গ্রাম পরিদর্শনে এসে গ্রামের সর্দারের মেয়ের প্রেমে পড়ে যান এবং বিয়ে করতে চান (দুনিয়ার যত গ্যাঞ্জাম, তার বহু ঘটনার পিছে একটা করে মেয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পুরো হিউম্যান হিস্টোরি জুড়ে যেমন চরিত্রহীন পুরুষদের দেখা গেছে, তেমনি লাস্যময়ী ট্রিকি নারীদেরও কোন কমতি নেই)। মন্ত্রী হুমকি দেয়, যদি তাঁর সাথে বিয়ে না দেয়া হয় তবে গ্রামের উপর প্রচুর কর ধার্য করা হবে। সালিম সিংয়ের সাথে বিয়ে ঠেকাতে গ্রামের সর্দার অন্য ৮৩ টা গ্রামের লোকসহ গ্রামত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রহস্যটা হল, কেউই তাদের চলে যেতে দেখেনি বা কোথায় তারা গিয়েছে কেউই জানেনা। তারা স্রেফ ভ্যানিসড(POOF!! like a pile of ash, blown by wind)।

কোট্টায়াম, ইদ্দুকি- কেরালা (লোহিত বৃষ্টিপাত)

কেরালার কোট্টায়াম এবং ইদ্দুকির দক্ষিনের জেলাগুলোতে এক অস্বাভাবিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায় ২০০১ সালের ২৫শে জুলাই থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সেটা হল বৃষ্টির পানির লাল রং। রংবহুল বৃষ্টিপাত কেরালাতে দেখা যায় ১৯৮৬ সালের প্রথমার্ধ থেকে এবং তারপর থেকে বেশ কয়েকবার, যার মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিকটা হল ২০১২ সালের জুলাই মাসে। ২০০৬ সালে কেরালার এই ঘটনা মিডিয়ার আকর্ষন কাড়তে সক্ষম হয় যখন মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দাবি করেন যে, রঙ্গিন পার্টিকেল গুলো ছিল ;বহির্জাগতিক কোষ(extraterrestrial cell);। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ এর নিচে দেখা যায়, বৃষ্টির পানি থেকে পৃথক করা সলিড পিগমেন্ট গুলোর সাথে জীবদেহের কোষের মিল রয়েছে! প্রাথমিক অফিসিয়াল রিপোর্টে বলা হয়, এক ধ্বংসপ্রাপ্ত উল্কার দ্বারা এই পিগমেন্ট বিস্তার লাভ করেছে, কিন্তু পরে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, trentopholia জেনাসের অন্তর্গত লাইকেন- গঠনকারী এলজির(algae)র স্পোরের সাথে আরও বেশি মিল রয়েছে এদের। আরও অনুসন্ধানে আবিষ্কৃত হয় যে, অত্র এলাকার গাছপালায়, পাথরে, এমনকি ল্যাম্পপোস্টে এই ধরনের এলজির প্রচুর পরিমানে উপস্থিতি রয়েছে।