বেংগল সোয়াম্প- পশ্চিমবঙ্গ (আলেয়া- ভূতুড়ে আলো)

আলেয়ার আলো বা জলাভূমির ভূতুড়ে আলোগুলো হল পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় জেলেদের দেখা জলাভুমির অব্যাখ্যাত কিছু আলো। এই আলোগুলো জেলেদের দ্বিধান্বিত করে, যার ফলে তারা সঠিক দিকনির্দেশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কেউ যদি একবার জলাভূমির এই আলেয়াকে অনুসরণ করতে শুরু করে, তবে তারা ডুবে মারাও যেতে পারে। অনেক মৃতদেহ পাওয়া গেছে জলাভূমির কুলে, বলা হয় এরা আলেয়ার ছলনার শিকার। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে, জলাভুমিতে বিচরণ করা এই ভূতুড়ে আলোগুলো আসলে সেইসব জেলেদের আত্মা বা ভূত যারা মাছ শিকার করতে গিয়ে প্রান হারিয়েছে। মাঝে মাঝে আলোগুলো জেলেদের দ্বিধায় ফেলে দেয় আবার মাঝে মাঝে তাদের আসন্ন বিপদের হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে (এক্ষেত্রে অনেকে হলিউডের এনিমেশন মুভি brave এ দেখানো will-o-the-wisp এর মিল পেতে পারেন। রাজকুমারী মেরিডাকে কয়েকবার বিপদের হাত থেকে বাঁচায় এরা, আবার সঠিক পথেরও সন্ধান দেয়)।

৫. বান্নি গ্রাসল্যান্ড রিসার্ভ – Rann of Kutch (ছির বাত্তি)

বান্নি গ্রাসল্যান্ড রিসার্ভ গুজরাটের দক্ষিণ প্রান্তে rann of kutch এর লবনাক্ত সমভূমিতে অবস্থিত। এটা একটা ঋতুভিত্তিক জলজ তৃণভূমি যা কিনা প্রতিবছর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে তৈরি হয়। এখানে রাতের বেলায় অব্যাখ্যাত রহস্যজনক অদ্ভুত আলোর নাচ দেখতে পাবার প্রচুর ঘটনার উল্লেখ আছে, যাকে স্থানীয়রা ;ছির বাত্তি; হিসেবে অভিহিত করে। বলা হয় এই আলোগুলো তেলের বাতির আলোর মতই উজ্জ্বল যা কিনা রং পরিবর্তন করে নীল, লাল, হলুদ বর্নধারন করতে পারে এবং দেখতে নাশপাতি আকৃতির চলন্ত বলের মত। তারা তীরের মত দ্রুতগতিতে চলতে পারে, আবার হঠাত করে স্থির দাঁড়িয়েও থাকতে পারে। স্থানীয় লোকগাথা অনুযায়ী, ;ছির বাত্তি; গুলো হল তৃণভূমির ;জীবনের অংশ; এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। কিছু লোক উল্লেখ করেছে যে, মাঝেমাঝে বাতিগুলো তাদের অনুসরণ করেছে জলাভূমির ভিতর দিয়ে চলার সময়। স্থানীয়রা ছাড়াও বিদেশীরা এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের সৈন্যরাও এই বাতি দেখেছে বলে উল্লেখ করেছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, জলা থেকে উত্থিত মিথেন গ্যাসের জারনের ফলে এই আলোর উতপত্তি হয়।



৬. গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র ডেল্টার অব্যাখ্যাত শব্দ (Mistpouffers, Barisal Guns)

Mistpouffers অথবা Barisal Guns হল একধরনের অব্যাখ্যাত শব্দ যার সাথে ;সনিক বুম; এর মিল রয়েছে এবং পৃথিবী জুড়ে পানির কাছাকাছি জনপদগুলোতে এসব শব্দ শোনা গেছে বলে প্রমান রয়েছে। বিশেষ করে ভারতে তাদের শোনা গেছে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের ;ডেল্টা রিজিয়ন; এ। সুপারসনিক জেট (শব্দের চেয়ে উচ্চগতিসম্পন্ন বিমান) এর সনিক বুম এর সাথে যদিও এদের মিল রয়েছে, কিন্তু রহস্যময় ব্যাপার হল এই ধরনের ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় এমনকি বিমান আবিষ্কার এর আরও অনেক আগে থেকেই। টি ডি লাটুচে নামের এক ব্রিটিশ অফিসার ১৮৯০ সালে তাঁর জার্নালে এই সম্পর্কে লেখেন। তিনি লেখেন, “Barisal Guns ভূকম্পনজনিত ধাক্কার ফলে উতপন্ন হয়, যদিও ভূমিকম্প ছাড়া এবং বড় ধরনের ভুকম্পনের আগে এদের শোনা গেছে। এই ঘটনার কিছু ব্যাখ্যা আছে, যার ভিতরে আছে ভূমিকম্প, পাথরের ভাঙ্গন, কাদার আগ্নেয়গিরি, গ্যাসের উদগিরনজনিত বিস্ফোরণ, ঝড়বাহিত শব্দ, সুনামি, উল্কা, দুরবর্তী বজ্রপাত এবং তথাকথিত booming sand.; এখনো এই রহস্যময় শব্দগুলো শোনা যায় এবং যা প্রতিনিয়ত গবেষকদের ধাঁধায় ফেলে যাচ্ছে।



৭. কঙ্গকা লা পাস- আকসাই ছিন, লাদাখ (ইন্দো-চাইনীজ ইউ এফ ও ঘাটি)

হিমালয়ের কঙ্গকা লা পাস আকসাই ছিনের ইন্দো-চাইনিজ সীমান্তে অবস্থিত। চীনের অন্তর্গত অংশ আকসাই ছিন নামে এবং ভারতীয় অধিকৃত অংশ লাদাখ নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে কম প্রবেশাধিকারমূলক এলাকাগুলোর একটি এবং দুই দেশের ভিতর চুক্তি অনুযায়ী এখানে কোন বর্ডার পেট্রল এর ব্যবস্থা নেই। সীমান্তের উভয়পাশের স্থানীয়রাই বিশ্বাস করে এই এলাকায় সমন্বিতভাবে দুই দেশের একটা ভুগর্ভস্থ ইউ এফ ও ঘাটি রয়েছে (যা বলা হল তা না থাক কিছু একটা তো আছে। হিমালয় তো দেখি আসলেই রহস্যময়!!!) স্থানীয়রা ভুগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা ইউ এফ ও দেখেছে অনেকবার, এমনটাই দাবি(যা রটে, তার কিছু তো বটে)। পর্যটকেরা অদ্ভুত ত্রিকোণাকৃতি আলোকবিশিষ্ট নিঃশব্দ আকাশযান দেখেছে মাটি থেকে উঠে আসতে এবং সম্পুর্ন খাঁড়া ভাবে আকাশে উঠে গেছে সেগুলো। স্থানীয় গাইডরা বলে এটা এখানের কোন নতুন জিনিস না বরং খুবই সাধারন ঘটনা! পর্যটকেরা এখানে দুই দেশের ভিতর ভ্রমনের অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করতে পারে না।
২০০৬ সালের জুনমাসে গুগল আর্থের স্যাটেলাইট ইমেজগুলো এই এলাকার(চাইনিজ অংশ) ১:৫০০ স্কেলের বিস্তৃত মডেল দেখায় যেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক বিল্ডিং, যেগুলোর সাথে একটা মিলিটারি ফ্যাসিলিটিরই তুলনা হতে পারে। আকসাই ছিন এমন একটা এলাকা যেখানে ইউরেশিয়ান এবং ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেট মিলে এক ;কনভারজেন্ট প্লেট বাউন্ডারী; তৈরি করেছে, মানে হল একটা প্লেট আরেকটার নিচে অবস্থান করছে এবং এই ঘটনা এই এলাকাকে সেইসব বিরল এলাকার একটায় পরিণত করেছে যেখানকার ভূপৃষ্ঠ অন্য জায়গার তুলনায় দ্বিগুণ পুরু(এবার ভাবুনতো ২০১২ মুভিটার কথা। সারা পৃথিবী যখন একের পর এক ভুমিকম্পে টালটামাল তখন মানুষের শেষ ভরসা সেই জাহাজ তিনটা কোথায় ছিল! জ্বি, এই হিমালয়েই। সৃষ্টিকর্তা পাহাড়গুলোকে তৈরি করেছেন পৃথিবীর পেরেক হিসেবে। যদি প্রশ্ন করেন সেখানেই কেন ভুমিকম্পের প্রকোপ বেশি তাহলে আমাকে একটি প্রশ্ন করতে দিন। ;হাসপাতালে তো মানুষেরা সুস্থ হয়ে ওঠে, তাহলে সেখানে কেন রোগীর সংখ্যা বেশি?



৮. রুপকুন্দ লেক- উত্তরখন্দ (কঙ্কাল হ্রদ)

রুপকুন্দ লেক হল এক হিমবাহ হ্রদ যা উত্তরখন্দের হিমালয়ান রেঞ্জের (আবার হিমালয়!!) ৫০০০ মিটার উপরে অবস্থিত। ১৯৪২ সালে এক বনরক্ষী রুপকুন্দের তীরে শতশত মানবকঙ্কাল দেখতে পান। বছরের পর বছর ভারতীয় এবং ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানীরা এই মৃত্যুরহস্য সমাধান করার জন্য বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে। বেশ কয়েকটা তত্ত্ব আছে এই সংরক্ষিত কঙ্কালগুলোর রহস্য ব্যাখ্যার জন্য। এক তত্ত্ব অনুযায়ী এই কঙ্কালগুলো আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ে মৃত্যুবরণকারী জাপানি সৈন্যদের। কেউ কেউ বলেন এগুলো কাশ্মীরের জেনারেল জোরাওয়ার সিং এবং তাঁর সৈন্যদের কঙ্কাল, আবার আরেক তত্ত্ব মতে এগুলো মুহাম্মদ তুঘলকের অসফল Garhwal হিমালয় অধিকার অভিযানের ফসল। এগুলোর কার্বন ডেটিং করে বয়স নির্ধারন করা হয়েছে ১২শ-১৫শ শতাব্দীর ভিতরে। তিব্বতের সাথে এই এলাকার ভিতর দিয়ে বাণিজ্যিক পথের কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। এক তত্ত্ব বলে এগুলো কনৌজ এর রাজা জশদেওয়াল এর লোকদের। তারা হিমালয়ের নন্দদেবী পাহাড়ে তীর্থে যাচ্ছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। পথে তারা প্রচণ্ড তুষার ঝড়ের কবলে পড়েন এবং খোলা পাহাড়ের গায়ে কোন আশ্রয় না পেয়ে প্রত্যেকে মৃত্যুবরন করেন।